ফিরে দেখা শিক্ষা: পর্যালোচনা, সংস্কার ও উত্তরণের পথরেখা
বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে শিক্ষায় বেশ কিছু সংস্কার ও উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসময়ে শিক্ষাক্রম এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার বিভিন্ন ধারার পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রচলন ও বিস্তার হয়েছে। মৌলিক শিক্ষায় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও আমাদের দেশের শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত মান থেকে অনেকটা দূরেই থেকে গেছি আমরা। একটি সমতাভিত্তিক সমাজ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্যের মূল কারণগুলির নৈর্ব্যক্তিক বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে আমরা কেন সফল হতে পারছি না তা খতিয়ে দেখার উপযুক্ত সময় এটা। গুণগত শিক্ষা বাস্তবায়ন ও তাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও অনেক চ্যালেঞ্জ এখনো মোকাবিলা করা যায় নি। যদিও প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত করা গেছে, সাক্ষরতা এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয় নি। এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের কৌশলকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে। শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর প্রান্তিক মানুষের জন্য এখনও বিরাট বাধা হয়ে রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা জনমান উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছে তার যথাযথ মূল্যায়ন প্রয়োজনীয়। আগামী প্রজন্মকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কারিগরি শিক্ষাধারার প্রচলন করা হলেও তা অনেকাংশেই শিক্ষার্থী ও দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় নি। পাবলিক ও প্রাইভেট বিভাজন উচ্চশিক্ষায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবধানকে ক্রমেই আরো প্রকট করে তুলেছে। সংস্কারের কথা উঠলেই শিক্ষাক্রমকে কেন্দ্রে রাখা হয়, তারপরেও আকাঙ্ক্ষিত শিখনযোগ্যতা অর্জন করে ওঠা অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় নতুন সংস্কার কার্যক্রমের আগে পূর্ববর্তী সংস্কারের ব্যর্থতার কারণগুলোর পর্যালোচনা জরুরি। এসব বিষয়কে বিবেচনায় রেখে শিক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ বা চিন্তা করেন তাঁদের কাছ থেকে মতামত ও প্রবন্ধ আহ্বান করছি যেগুলোকে আমরা আন্তর্জালে প্রকাশ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।